ভূমিকা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কর্মক্ষেত্রের ধরণ পরিবর্তন করছে, যা শিল্প, চাকরির ধরন এবং কর্মস্থলের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে। অটোমেশন, রোবটিক্স এবং মেশিন লার্নিং এমন কাজগুলো করছে যা আগে শুধুমাত্র মানুষের দ্বারা পরিচালিত হতো। AI একদিকে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ালেও, অন্যদিকে এটি চাকরি নিরাপত্তা, দক্ষতার চাহিদা, গোপনীয়তা এবং ন্যায্য শ্রম চর্চা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে শ্রম আইনকে হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, যাতে কর্মীদের অধিকার রক্ষা করা যায় এবং পরিবর্তিত কর্মজগতে মানিয়ে নেওয়া যায়।
১. AI কীভাবে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করছে
AI ক্রমবর্ধমানভাবে বিভিন্নভাবে কাজের কাঠামো ও প্রকৃতি পরিবর্তন করছে।
১.১ পুনরাবৃত্ত কাজের অটোমেশন
AI সহজ ও পূর্বানুমেয় কাজগুলোতে দক্ষ। যেমন, উৎপাদন, কাস্টমার সার্ভিস ও লজিস্টিকস খাতে AI দ্বারা ডেটা এন্ট্রি, ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনা, ও গ্রাহক সেবা পরিচালিত হচ্ছে। এতে কাজ দ্রুত হয় এবং ভুল কমে, তবে এতে ঐসব খাতের কর্মীরা চাকরি হারাতে পারেন।
১.২ মানব উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
AI অনেকক্ষেত্রে মানুষকে সহায়তা করে কাজের গুণগত মান ও গতি বাড়ায়। যেমন, স্বাস্থ্য খাতে ডাক্তারদের রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে, আইন খাতে প্রচুর নথি পর্যালোচনায় সহায়তা করে। তবে, এই প্রযুক্তি ব্যবহারে নতুন দক্ষতা শেখার প্রয়োজন হয়।
১.৩ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি
AI ডেটা সায়েন্স, প্রোগ্রামিং, সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন চাকরি সৃষ্টি করছে। তবে এসব কাজের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন, যা অন্য খাতের চাকরিচ্যুত কর্মীদের পক্ষে শেখা কঠিন হতে পারে।
২. কর্মসংস্থানে AI এর চ্যালেঞ্জ
২.১ চাকরি হারানো ও বেকারত্ব
AI এর কারণে সহজ কাজগুলো অটোমেটেড হয়ে যাচ্ছে, ফলে অনেক কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন। যেমন, রিটেইল স্টোরে সেলফ-চেকআউট মেশিন বা কাস্টমার সার্ভিস বটের ব্যবহার। এর মোকাবিলায় পুনঃপ্রশিক্ষণ ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার।
২.২ দক্ষতার ঘাটতি
AI ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন, যা অনেক কর্মীর মধ্যে নেই। এই ব্যবধান পূরণে শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ জরুরি।
২.৩ আয় বৈষম্য
AI এর ফলে উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন কর্মীরা বেশি আয় করছেন, আর নিম্নদক্ষ কর্মীরা চাকরি হারাচ্ছেন বা বেতন কম পাচ্ছেন। এতে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে।
২.৪ গোপনীয়তা ও নজরদারি
AI কর্মীদের কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য হুমকি হতে পারে। আইন না থাকলে এটি কর্মপরিবেশকে চাপপূর্ণ করে তুলতে পারে।
৩. শ্রম আইনে AI এর প্রভাব
৩.১ কর্মসংস্থানের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ
AI ভিত্তিক গিগ-ওয়ার্ক বা ফ্রিল্যান্স কাজে কর্মী-মালিক সম্পর্কের সংজ্ঞা পরিষ্কার হওয়া জরুরি, যেন কর্মীরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পান।
৩.২ চাকরি নিরাপত্তা আইন হালনাগাদ
AI-এর কারণে চাকরি হারালে ক্ষতিপূরণ ও পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আইনগতভাবে নিশ্চিত করা দরকার।
৩.৩ কর্মঘণ্টা নিয়ন্ত্রণ
AI-র মাধ্যমে কর্মী সারাক্ষণ সংযুক্ত থাকে। তাই আইন দ্বারা নির্ধারিত কাজের সময় নিশ্চিত করতে হবে ও ‘ডিসকানেক্ট করার অধিকার’ দিতে হবে।
৩.৪ ডেটা গোপনীয়তা রক্ষা
AI-এর মাধ্যমে সংগৃহীত কর্মীদের তথ্য যেন নিরাপদ থাকে, তার জন্য কড়া গোপনীয়তা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৩.৫ গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের সুরক্ষা
AI ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে কর্মীদের স্বাধীন ঠিকাদার হিসেবে দেখিয়ে সুবিধা না দেওয়ার প্রবণতা রোধে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।
৪. অভিযোজন কৌশল
৪.১ সরকারী উদ্যোগ
শিক্ষায় বিনিয়োগ: ডিজিটাল ও AI বিষয়ক শিক্ষা
চাকরি রূপান্তর সহায়তা: প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা
অটোমেশনের কর: অটোমেশন ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের উপর কর আরোপ করে এই অর্থ পুনঃপ্রশিক্ষণে ব্যয় করা যেতে পারে।
৪.২ নিয়োগকারীদের ভূমিকা
দায়িত্বশীল AI ব্যবহার
কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান
AI ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
৪.৩ কর্মী ও ইউনিয়নের ভূমিকা
আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ
কর্মীদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করা
৫. ভবিষ্যৎ পরিপ্রেক্ষিত
AI ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে, যা নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ এনে দেবে। এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শ্রম আইন হালনাগাদ ও সারাজীবন শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিলে প্রযুক্তির সুফল সকলের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
⬜ উপসংহার
AI কর্মক্ষেত্রে একটি বিপ্লব আনছে। এটি যেমন কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও নতুন চাকরি সৃষ্টি করে, তেমনি চাকরি হারানো, আয় বৈষম্য ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই শ্রম আইনকে যুগোপযোগী করতে হবে, যেন সকল কর্মী ন্যায্য আচরণ পান। সরকার, নিয়োগকারী ও কর্মীদের একসাথে কাজ করতে হবে যাতে প্রযুক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।
⬜ তথ্যসূত্র (References):
1. Morgan R. Frank – Generative Artificial Intelligence Shatters Models of AI and Labor – Link
2. Julian Posada – The Future of Work Is Here: Toward a Comprehensive Approach to Artificial Intelligence and Labour – Link
3. Jin Liu, Xingchen Xu, Xi Nan, Yongjun Li, Yong Tan – Generate the Future of Work through AI – Link
4. Katya Klinova, Anton Korinek – AI and Shared Prosperity – Link