সাইবার আইনের জুরিসডিকশন বা এখতিয়ার কেমন হউয়া উচিত?
ডঃ জুলফিকার আহম্মদ
প্রফেসর, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সাইবার আইনের এখতিয়ার (Jurisdiction) কেমন হওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরি:
১. আঞ্চলিক (Territorial) এখতিয়ার
সাইবার অপরাধ বা ডিজিটাল কার্যকলাপ কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাই, সাইবার আইনের আঞ্চলিক এখতিয়ার হতে পারে:
- জাতীয় এখতিয়ার: সংশ্লিষ্ট দেশের ভেতরে সংঘটিত অপরাধ বা কার্যকলাপের ওপর আইন প্রযোজ্য হবে।[1]
- বহির্ভূত এখতিয়ার (Extraterritorial Jurisdiction): যদি অপরাধটি অন্য দেশে সংঘটিত হয় কিন্তু সেটির শিকার বা প্রভাব সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান ভোগ করে, তাহলে সেই দেশও আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
উদাহরণ:
বাংলাদেশের একজন নাগরিক যদি অন্য দেশে বসে বাংলাদেশের কোনো সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করে, তবে বাংলাদেশের সাইবার আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হওয়া উচিত।
২. বিষয়ভিত্তিক (Subject-Matter) এখতিয়ার
সাইবার আইনকে এমনভাবে গঠন করা উচিত যেন এটি নিম্নলিখিত সাইবার অপরাধের ওপর এখতিয়ার প্রতিষ্ঠা করতে পারে:[2]
- ডাটা চুরি ও তথ্য ফাঁস
- সাইবার হ্যাকিং ও মালওয়্যার আক্রমণ
- সাইবার বুলিং ও হয়রানি
- ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রতারণা ও ভুয়া তথ্য প্রচার
- ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল লেনদেন সংক্রান্ত অপরাধ
যতদিন প্রযুক্তির উন্নয়ন হবে, ততদিন নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ তৈরি হবে। তাই, আইনটি প্রযুক্তিগতভাবে নিরপেক্ষ (Technology-Neutral) হওয়া উচিত যেন এটি ভবিষ্যতের অপরাধগুলোকেও কাভার করতে পারে।
৩. ব্যক্তি ও সত্তাভিত্তিক (Personal & Entity-Based) এখতিয়ার
সাইবার আইন কেবল অপরাধীর জাতীয়তা অনুযায়ী সীমাবদ্ধ না থেকে নিম্নলিখিত ভিত্তিতে এখতিয়ার নির্ধারণ করা যেতে পারে:
- বসবাসের ভিত্তিতে (Residence-Based): সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা যদি অপরাধ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
- শিকারভুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থার অবস্থানের ভিত্তিতে (Victim-Based): যদি অপরাধের শিকার ব্যক্তি বা সংস্থা কোনো নির্দিষ্ট দেশে থাকে, তাহলে সেই দেশ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
- ডিজিটাল প্লাটফর্ম বা সার্ভারের অবস্থানের ভিত্তিতে (Server-Based): যদি অপরাধটি এমন কোনো সার্ভারের মাধ্যমে সংঘটিত হয়, যা একটি নির্দিষ্ট দেশের ভেতরে অবস্থিত, তাহলে সে দেশ এখতিয়ার দাবি করতে পারে।
৪. বহুজাতিক (Transnational) এখতিয়ার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
সাইবার অপরাধ প্রায়ই আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে, তাই একক দেশের এখতিয়ার সীমিত হলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন:
- MLAT (Mutual Legal Assistance Treaty): বিভিন্ন দেশের মধ্যে আইনি সহায়তা বিনিময়ের চুক্তি।
- INTERPOL ও UN-র মত সংস্থার সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতার সহজ করতে।
- GDPR বা ডিজিটাল ডাটা সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা।
উপসংহার
একটি কার্যকর সাইবার আইন এমন হওয়া উচিত যা আঞ্চলিক, বিষয়ভিত্তিক, ব্যক্তি ও বহুজাতিক এখতিয়ারকে অন্তর্ভুক্ত করে।[3] এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগতভাবে নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর আইনগত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যাতে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
[Citation in English: Ahmed, Zulfiquar. “”What should the jurisdiction of cyber law be like?”, Ain Onweshon, 16 Feb, 2025. Available at সাইবার আইনের জুরিসডিকশন বা এখতিয়ার কেমন হউয়া উচিত? – Ain Onweshon]
[Citation in Bengali: আহম্মদ, জুলফিকার। “সাইবার আইনের জুরিসডিকশন বা এখতিয়ার কেমন হউয়া উচিত?”, আইন অন্বেষণ, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫. Available at সাইবার আইনের জুরিসডিকশন বা এখতিয়ার কেমন হউয়া উচিত? – Ain Onweshon]
References/তথ্যপুঞ্জি
[1] Ahmed, Zulfiquar. (2009). A Text Book on Cyber Law in Bangladesh, Dhaka: National Law Book Company. [Published 2009]
[2] Ahmed, Zulfiquar. (2014). Bangladesher Cyber Ain: Totto O Bishleshon [In Bengali], Dhaka: Muhit Publications. ISBN: 978-984-90586-0-1. [Published 2014]
[3] Ahmed, Zulfiquar. (2005). A Hand Book of Computer and Law, 2005, Rajshahi: Parisha Publications. [Published 2005]