ভূমিকা:
২০১৩ সালে, বাংলাদেশ সরকার একটি কল্যাণমূলক আইন প্রণয়ন করে, যা ‘পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ আইন, ২০১৩‘ নামে পরিচিত। এই আইন প্রণয়নের দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—প্রবীণ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধ জনসংখ্যা বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। কমে যাওয়া জন্মহার এবং বেড়ে যাওয়া গড় আয়ুর ফলে তরুণদের তুলনায় বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং এর সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব নীতিনির্ধারকদের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে এবং প্রবীণদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে এই আইন প্রণয়ন করেছে, যেখানে তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সন্তানদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।
এই গবেষণাপত্রটি পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ আইন, ২০১৩ এর কার্যকারিতা পর্যালোচনা করবে এবং এটি কীভাবে বাংলাদেশের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখছে তা বিশ্লেষণ করবে। প্রথমে, এটি বিশ্লেষণ করবে যে কেন অনেক সন্তান তাদের বৃদ্ধ পিতা-মাতার যথাযথ যত্ন ও ভরণ-পোষণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই আইনের মূল বিধানগুলো তুলে ধরা হবে। তৃতীয়ত, আইনের সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। চতুর্থত, এই আইন বাস্তবায়নে যে বাধাগুলো রয়েছে, তা বিশ্লেষণ করা হবে। সর্বশেষে, অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই আইনটির প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করা হবে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে।
সন্তানদের পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ না দেওয়ার কারণসমূহ:
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রতি পরিবারের, সমাজের এবং রাষ্ট্রের গভীর শ্রদ্ধাবোধের ঐতিহ্য রয়েছে। তবে, বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ ও পারিবারিক বন্ধন ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে। নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে তরুণ প্রজন্ম প্রবীণদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে পুরাতন বা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করছে। অনেক ক্ষেত্রেই, পরিবারের তরুণ সদস্যরা তাদের বৃদ্ধ পিতা-মাতার সাথে বসবাস করতে অনাগ্রহী।
উপরন্তু, নগরায়ণ, অভিবাসন এবং নারীদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ফলে পরিবারগুলো ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ মূলত রাজধানী বা প্রধান শহরগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকায়, পরিবারগুলোর সদস্যদের ভিন্ন জায়গায় বসবাস করতে হচ্ছে। ফলে, যৌথ পরিবারের প্রচলিত কাঠামো ভেঙে পড়ছে, যা প্রবীণদের পারিবারিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে, দরিদ্র প্রবীণরা এই পরিস্থিতিতে চরম অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনিরাপত্তার সম্মুখীন হচ্ছে।
অধিকন্তু, বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার অভাব তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পায়, এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় তারা আরও অসহায় হয়ে পড়ে। প্রবীণ নারীরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকে, কারণ তাদের সামাজিক–অর্থনৈতিক অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়।
অন্যদিকে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় নারীরা, যারা একসময় পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের দেখাশোনার প্রধান ভূমিকা পালন করত, এখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে, প্রবীণরা প্রয়োজনীয় যত্ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের ছোট নাতি-নাতনিদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।
এছাড়াও, যুবকদের উচ্চ বেকারত্বের হার তাদের পিতা-মাতার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান কঠিন করে তুলছে। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে অনেক সময় প্রবীণদের বোঝা হিসেবে দেখা হয়।
বর্তমান সমাজে পরিবার কাঠামো ক্রমশ পারমাণবিক হয়ে উঠছে, যা প্রবীণদের সহায়তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ আইন, ২০১৩ শুধুমাত্র বাবা-মায়েরই নয়, দাদা-দাদী এবং নানা-নানার ভরণ-পোষণের দায়িত্বও সন্তানের ওপর ন্যস্ত করেছে। একমাত্র সন্তান হলে, তার জন্য একসঙ্গে চারজন প্রবীণের দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ আইন, ২০১৩: সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা, আইনের সারসংক্ষেপ:
পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ আইন, ২০১৩ অনুসারে, যদি কোনো সন্তান তার পিতা-মাতাকে জোরপূর্বক বৃদ্ধাশ্রমে বা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেয় অথবা বৈধ কারণ ছাড়া তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে পিতা-মাতা আইনের মাধ্যমে প্রতিকার চাইতে পারবেন। এই আইনের বিধান অনুযায়ী সন্তানদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী, ‘ভরণ-পোষণ’ বলতে প্রধানত স্ত্রীকে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের জন্য প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা বোঝায়। তবে পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ আইন, ২০১৩-তে ‘ভরণ-পোষণ’ শব্দটি আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর আওতায় আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি খাদ্য, পোশাক, চিকিৎসা, বাসস্থান ও সন্তানের মানসিক সঙ্গও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সন্তানদের দায়িত্ব:
এই আইনের আওতায় পুরুষ ও মহিলা উভয় সন্তানই সমানভাবে তাদের পিতা–মাতার ভরণ–পোষণের জন্য দায়বদ্ধ। কোনো নির্দিষ্ট সন্তানের ওপর দায়িত্ব আরোপ না করে, আইনটি সকল সন্তানকে যৌথভাবে এই দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানায়।
- পিতা–মাতার সম্মতি ছাড়া কোনো সন্তান তাদের বৃদ্ধাশ্রমে বা অন্য কোথাও পাঠাতে পারবে না।
- সন্তানেরা নিয়মিত যত্ন, চিকিৎসা এবং যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বাধ্য হবে, এমনকি তারা যদি আলাদা থাকেও।
দাদা–দাদী ও নানা–নানার জন্য ভরণ–পোষণ:
এই আইন শুধুমাত্র পিতা-মাতার জন্যই নয়, দাদা–দাদী ও নানা–নানার ভরণ–পোষণের বিষয়েও সুরক্ষা প্রদান করে। যদি কোনো ব্যক্তির বাবা-মা না থাকে, তবে তার ওপর তার দাদা-দাদী ও নানা-নানার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বর্তায়। যদি সন্তানরা এই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের আইনগতভাবে দায়ী করা হতে পারে।
আর্থিক সহায়তার পরিমাণ:
যদি সন্তানরা পিতা-মাতার সাথে না থাকে, তবে তাদের আয়ের একটি যুক্তিসঙ্গত অংশ তাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয় করতে হবে। তবে, আইনে ‘যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে বা এর নির্দিষ্ট পরিমাণ কত হওয়া উচিত, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
আইন লঙ্ঘনের শাস্তি:
এই আইনের ৩ ও ৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান রয়েছে।
- সন্তান যদি আইনের শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়, তবে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড হতে পারে।
- যদি সন্তানের স্বামী/স্ত্রী বা পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রবীণদের ভরণ–পোষণে বাধা দেয়, উসকানি দেয়, বা অসহযোগিতা করে, তাহলে তাদেরও একই শাস্তির আওতায় আনা হবে।
অপরাধের ধরন ও অভিযোগ দায়ের প্রক্রিয়া:
- এই আইন অনুযায়ী অপরাধসমূহ শাস্তিযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং আপসযোগ্য। অর্থাৎ, অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন চাইতে পারেন এবং পারিবারিকভাবে আপসের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।
- অভিযোগ দাখিল করতে হবে প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে।
- আইনে স্পষ্টভাবে ভরণ–পোষণের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।
- অভিযোগ কেবল পিতা–মাতা নিজেরাই লিখিতভাবে দাখিল করতে পারবেন। কিন্তু যদি তারা অসুস্থ বা অক্ষম হন, তবে কে তাদের পক্ষে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন, তা এই আইনে স্পষ্ট করা হয়নি।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (Alternative Dispute Resolution – ADR):
বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আদালত সংশ্লিষ্ট মামলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারে।
- উভয় পক্ষকে শুনানির সুযোগ দিতে হবে।
- এই নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আদালতের ঘোষণার সমতুল্য বলে গণ্য হবে।
পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ আইন, ২০১৩–এর ফাঁকফোকর এবং সীমাবদ্ধতা:
২০১৩ সালে প্রণীত পিতা–মাতার ভরণ–পোষণ আইন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ওপর তাদের বৃদ্ধ পিতা-মাতার আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পণ করে। তবে, এই আইনের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং তাতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার দাবি তৈরি হয়েছে।নিম্নে এই আইনের প্রধান ফাঁকফোকর ও সমস্যাগুলো আলোচনা করা হলো—
১. ভরণ–পোষণের পরিমাণ নির্ধারণে অস্পষ্টতা
আইনটি স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করেনি যে পিতা–মাতার ভরণ–পোষণের জন্য সন্তানদের কত টাকা বা কী পরিমাণ সম্পদ প্রদান করতে হবে।
সমস্যা:
- ‘যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ’ (reasonable amount) শব্দটি ব্যবহার করা হলেও, এটি কিভাবে নির্ধারণ করা হবে বা কে নির্ধারণ করবে, তা উল্লেখ নেই।
- সন্তানদের আয়ের ভিত্তিতে ভরণ–পোষণের হিসাব করা হলেও এতে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়নি।
সমাধান:
আইনে নির্দিষ্ট গাইডলাইন সংযোজন করা উচিত, যাতে জীবনযাত্রার ব্যয়, ইনফ্লেশন এবং সন্তানের আয়ের ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।
২. স্বেচ্ছায় আলাদা থাকা পিতা–মাতার জন্য কোনো নির্দেশনা নেই
আইনে বলা হয়েছে যে সন্তানেরা পিতা–মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারবে না বা আলাদা থাকতে বাধ্য করতে পারবে না।
সমস্যা:
- যদি কোনো পিতা–মাতা স্বেচ্ছায় আলাদা থাকতে চান, তবে সন্তানদের আর্থিক দায়বদ্ধতা কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।
- যদি সন্তান নিজেও আর্থিক সংকটে থাকে, তবে তার করণীয় কী হবে, সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
সমাধান:
আইনে স্বেচ্ছায় আলাদা থাকা পিতা–মাতাদের জন্য বিকল্প সহায়তা ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, যেখানে সরকারী অনুদান বা ভাতা প্রদান করা যেতে পারে।
৩. সৎ–মাতা, সৎ–পিতা এবং দত্তক পিতা–মাতার কোনো স্বীকৃতি নেই
এই আইন শুধুমাত্র জৈবিক (biological) বাবা–মাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
সমস্যা:
- সৎ–মা/সৎ–বাবা, দত্তক বা পালক পিতা–মাতার কোনো আইনি অধিকার নেই।
- সৎ বা দত্তক সন্তানদের দায়িত্ব সম্পর্কে আইন নীরব।
সমাধান:
আইনে সৎ–মাতা/পিতা ও দত্তক পিতা–মাতার অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে সংযোজন করা প্রয়োজন।
৪. নিঃসন্তান প্রবীণদের জন্য কোনো সুরক্ষা নেই
আইনটি শুধুমাত্র সন্তানদের মাধ্যমে ভরণ–পোষণের ব্যবস্থা করেছে।
সমস্যা:
- নিঃসন্তান প্রবীণরা এই আইনের আওতায় কোনো সহায়তা পান না।
- সরকারি বা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিষয়টি উপেক্ষিত।
সমাধান:
আইনে নিঃসন্তান প্রবীণদের জন্য সরকার–নির্ধারিত ভাতা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা উচিত।
৫. প্রবীণদের পক্ষে অভিযোগ দায়ের করার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই
আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র ভুক্তভোগী পিতা–মাতারাই অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন (Section 7(2))।
সমস্যা:
- যদি কোনো প্রবীণ গুরুতর অসুস্থ বা শারীরিকভাবে অক্ষম হন, তাহলে কে তার হয়ে অভিযোগ দাখিল করবে, তা আইন নির্ধারণ করেনি।
- গ্রামের দরিদ্র ও নিরক্ষর প্রবীণদের জন্য আদালতে মামলা করা কঠিন।
সমাধান:
আইনে তৃতীয় পক্ষ যেমন, সরকারি সংস্থা, আত্মীয়স্বজন, সমাজসেবী বা আইনজীবীকে প্রবীণদের পক্ষে মামলা করার অনুমতি দেওয়া উচিত।
৬. দাদা–দাদী ও নানা–নানার জন্য অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই
আইন অনুযায়ী দাদা–দাদী ও নানা–নানা নাতি–নাতনির কাছ থেকে ভরণ–পোষণ পেতে পারেন (Section 5)।
সমস্যা:
- কিন্তু এই ভরণ–পোষণের দাবিতে অভিযোগ দায়ের করার কোনো সুস্পষ্ট আইনি প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হয়নি।
সমাধান:
- দাদা–দাদীদের অভিযোগ দায়েরের জন্য বিশেষ আদালত বা তদারকি সংস্থার ব্যবস্থা করা উচিত।
৭. দ্রুত ও কার্যকর বিচার প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি
আইনে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমার মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির কথা বলা হয়নি।
সমস্যা:
- প্রবীণরা দীর্ঘদিন মামলা চলার কারণে ভরণ–পোষণ পেতে দেরি হয়।
- অন্তর্বর্তীকালীন (interim) সহায়তার ব্যবস্থা নেই।
সমাধান:
- একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
- অন্তর্বর্তীকালীন (interim) সহায়তা দেওয়ার বিধান যুক্ত করা উচিত।
৮. ফ্যামিলি কোর্টে মামলা দায়েরের বিষয়ে অস্পষ্টতা
আইনটি স্পষ্ট করেনি যে পিতা–মাতা পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন কি না।
সমস্যা:
- ফ্যামিলি কোর্টে মামলার সুযোগ থাকলে প্রবীণরা দ্রুত ন্যায়বিচার পেতে পারেন, কিন্তু এই আইন তা নির্দিষ্ট করেনি।
- কোন পরিস্থিতিতে প্রবীণরা আদালত থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন, তা স্পষ্ট নয়।
সমাধান:
আইনে পরিবার আদালতের স্পষ্ট উল্লেখ এবং ক্ষতিপূরণের নিয়ম সংযোজন করা উচিত।
আইনের উন্নতির জন্য সুপারিশ
শক্তিশালী প্রয়োগ ব্যবস্থা:
আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষকে তথ্য প্রদান ও প্রচারণা চালানো দরকার।
সরকারি সহায়তা:
সরকারের পক্ষ থেকে বৃদ্ধ ভাতা, কম খরচে চিকিৎসা ও আবাসন প্রকল্প চালু করা উচিত।
পারিবারিক মধ্যস্থতা:
পরিবারভিত্তিক সমাধানের জন্য মধ্যস্থতা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনা:
সন্তান যদি আর্থিক সংকটে থাকে, তবে তাকে আইনি রক্ষাকবচ দেওয়া দরকার।
উপসংহার:
পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ প্রবীণদের সুরক্ষা প্রদানে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তবে, এর কিছু দুর্বলতা ও অস্পষ্টতা রয়েছে, যা আইনের কার্যকারিতা ব্যাহত করে।
যদি আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা হয় এবং সামাজিক ও সরকারি সহায়তা বাড়ানো হয়, তাহলে এটি প্রবীণদের জন্য আরও কার্যকর ও মানবিক হয়ে উঠবে।
রেফারেন্স:
১. UN Women, The Status of Women in Bangladesh Labor Market (২০২২)
২. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, Labour Force Survey 2022 (২০২২)
৩. Parents Maintenance Act 2013 (বাংলাদেশ)
৪. Muslim Family Laws Ordinance 1961 (বাংলাদেশ)
One Response
অসাধারণ!