নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা করতে পারবেন কি না, এটি একটি জটিল বিষয়। সংবিধান ১৯৭২ সালে গৃহীত হয় এবং এতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। যেমন:
অনুচ্ছেদ ৭: সংবিধানের সর্বোচ্চতা ও আইনের শাসন
অনুচ্ছেদ ১১: প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র
অনুচ্ছেদ ২৭: আইনের সমতা
অনুচ্ছেদ ৩৯: চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩১: জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার
তবে বাস্তবে এসব আদর্শ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে—
রাজনৈতিক মেরুকরণ ও স্বৈরাচারী প্রবণতা: প্রধান দুই দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) একে অপরের বিরোধিতায় কঠোর অবস্থান নেয়, যা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে।
বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যম: সংবিধানে গ্যারান্টি দেওয়া হলেও সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করেছে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: বিচার বিভাগে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ রয়েছে, যা ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় বাধা সৃষ্টি করে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন: গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে।
তবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা অসম্ভব নয়, যদি কিছু শর্ত পূরণ করা যায়—
রাজনৈতিক সদিচ্ছা: শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে চলতে হবে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালীকরণ: বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
সুশীল সমাজ ও জনগণের সম্পৃক্ততা: নাগরিকদের চাপ প্রয়োগ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক চাপ: জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১ অনুযায়ী, বাংলাদেশকে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে যেখানে গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকবে। তবে বাস্তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দমনমূলক নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে সংবিধানের এই আদর্শ বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু যদি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে, তাহলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা করতে সক্ষম হতে পারেন।